Header Ads

Header ADS

ফেব্র“য়ারি এবং বাংলা ভাষার সেরা অর্জন



মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন

বাংলা ভাষায় ইসলামচর্চা এখন আর কোনো উড়াল খবর নয়। বরং কিছুটা জাতে ওঠার সিঁড়িও। ইসলামের নাম শোনলেও যাদের শরীরে জ্বর আসে তারাই যখন আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ করেন  তখন বিষয়টা ধুলোয় ফেলে দেয়া যায় না। সত্যি কথা কি, নিজেকে অমর করে রাখতে চায় সকলেই। ধর্ম নিয়ে কুলাঙ্গার নাস্তিক্যবাজ যতোই চেঁচামেচি করুক  ধর্মই যে অমর সত্য এটা তারাও বুঝে। বুঝে, ধর্মের পরশই মানবজীবনে আনে অমরত্বের বিভা। এই বিভার দীপ্তি এখন মধ্যাকাশের সূর্যের মতো স্পষ্ট।

এই বাংলাদেশে ধর্ম বললে ইসলামকেই বুঝতে হয়। অথচ দীর্ঘকাল পর্যন্ত এ দেশের ভাষা সাহিত্যকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে এদেশের মানুষের ধর্ম থেকে। কাম ও রমণকেন্দ্রিক চর্চিত সাহিত্য এ কারণেই সমাজের সকল শ্রেণীকে তৃপ্ত করতে পারেনি। ওঠতি যৌবনের পালের ‘হাওয়া’ আমাদের ‘সাহিত্য’ তাই সমাজের সুশীল ও সভ্যজনের ঘরে সমাদর পায়নি। জীবন ও বোধ সৌন্দর্যে যারা মণ্ডিত তাদের হতাশায় হতে হয়েছে সাহিত্য-বিমুখ।

এ দেশে যারা ইসলামকে জীবনব্যাপী চর্চার আবশ্যিক অঙ্গ হিসেবে গড়ে তুলতে ছিলেন আপসহীন ধর্মশিক্ষার প্রাথমিক ও অনিবার্য পাঠদান ও তার অনুশীলনে দেশকে গড়ে তুলতেই কেটে গেছে তাদের শত বছর। শাসকযন্ত্র ও ধর্মবিমুখ বিত্তবানদের উপেক্ষার মুখে ভাষাতীত ত্যাগে তাঁরা গড়ে তুলেছেন লাখ লাখ মসজিদ। প্রতিটি মসজিদের চত্বরে ধর্মশিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিজে এবং সপরিবারে উপোস করে মুসলমানদের সন্তানের মুখে তুলে দিয়েছেন কালেমানামা। তাদের সে অপদানকে গবেষণার খাতায় তুলে আনবার মতো সাহসী গবেষক কোথায়! তারপর এক সময় সবিশেষ স্বাধীনতার পর ক্রমাগত বরফ গলতে শুরু করল। আলেমগণের কর্মক্ষেত্র বিভিন্নমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ল। হাসি ফুটলো বাংলাভাষার মুখে। ধর্মের ছোঁয়ায় রক্তেকেনা বাংলাভাষা হয়ে উঠলো জারিত রসে সবুজ।

তিরিশখণ্ডে সমাপ্ত পাক কুরআনের তাফসীরগ্রন্থ কেবল লেখক মাওলানা আমীনুল ইসলামেরই অনবদ্য অর্জন নয়। এ অর্জন আমাদের বাংলাভাষার। ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের মর্যাদাশীল অনুবাদ থেকে শুরু করে এমদাদিয়া লাইব্রেরির আশরাফুত তাফসীর পর্যন্ত বাংলাভাষায় পবিত্র কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলোর যে অমূল্যভাণ্ডার গড়ে উঠেছে ভাবলেও প্রাণ শীতল হয়। থরে থরে সাজানো কুরআনিক গ্রন্থাবলির দিকে তাকিয়ে কোনো পাপীও মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। সিহাহসিত্তার অনুবাদ, বুখারি শরিফের ভাষ্য, মেশকাত শরিফের দীর্ঘল ব্যাখ্যা আর মাওলানা মনযুর নুমানীর মা’আরিফুল হাদিসতো আমাদের ভাষার আত্মাকে তৃপ্ত করে দিয়েছে। স্বার্থক করেছে সালাম রফিক বরকতের রক্তদানকে! আমাদের ভাষাশহীদরা কি জানতো একদা তাদের রক্ত এভাবে ফুলে-ফলে মুগ্ধ করবে জগতবাসিকে!

জীবনের যতো অনুবাদ ধর্মের শাখাও ততো। ইসলামি সাহিত্যের বিষয়-বৈচিত্র্যের রহস্যও এটাই। গল্প কবিতা জীবনী ইতিহাস গবেষণা রাজনীতি অর্থনীতি প্রেম-বিদ্রোহ স্বপ্ন খেদ প্রার্থনাÑ সবই প্রাণিত এখানে প্রাণের ভাষায়। আশ্চর্য তিন চার দশকের ক্ষুদ্র পরিসরে বাংলাভাষা এতো বিশাল সৃষ্টিসম্ভারে জাঁকিয়ে উঠলো অতীতে তার দৃষ্টান্ত বিরল।

এখন থেকে তিরিশ বছর আগের একটি জরিপে দেখা গেছে এই উপমহাদেশে ধর্মশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র দেওবন্দ মাদরাসার সন্তানদের রচনা সংখ্যা ৯৯ হাজার! অথচ লেখালেখিটা এদের চর্চার প্রধান বিষয় নয়। ধর্মের শিক্ষাদান ও তার অনুশীলনে মানুষকে অভ্যস্ত করে তোলাই এদের প্রকান কাজ। সন্দেহ নেই উল্লিখিত রচনাসংখ্যা তাদের কর্মতৎপরতার সূর্য-দলিল। দারুল উলূম দেওবন্দের এদেশীয় সন্তানদের জন্যেও এ এক শুভসন্দেশ। তাছাড়া এদেশে কেন একাডেমি বইমেলা কিংবা ঢাকা বইমেলায় ইসলামি প্রকাশনাকে নানা কৌশলে ঠেকিয়ে রাখা হয় তার রহস্যও এটাই। কিন্তু আল্লাহর জন্য যারা সাধনা করে; যারা কর্মের প্রতিদান চায় পরপারে এসব ভঙুর কৌশলে কি তাদের দমিয়ে রাখা যাবে?

নাস্তিকতার কলঙ্কজলে সিঞ্চিত আমাদের কিছু কৃষ্ণ-মানিক হয়তো এই ভেবে আমোদিত আমরা চোখ খুলব না! দেখি সূর্য কিভাবে ওঠে! খোদার লানতে আত্মান্ধরা থাকুক চোখ বন্ধ করে। আল্লাহ প্রেমিকদের কলমরসে প্রাণ ফিরে পাক সবুজ বাংলার প্রতি ইঞ্চি মাটি। আল্লাহবিশ্বাসী কলমযোদ্ধাদের এই অবিনাশী প্রত্যয় এখন খোদার রহমতে দুর্মর। রচনা অনুবাদ সংকলন সম্পাদনায় যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিনই নতুন নাম, নতুন চিন্তা, নতুন সজ্জা! বাঁক সৃষ্টি হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে অনুসন্ধানের নবতর চোখ। দুলুনি সৃষ্টি হচ্ছে পৃথিবীর মুগ্ধতায়। এই নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে নতুন দিগন্ত!

 একদা হাসতাম। এখন হাসি না। হাসতাম কোনো কোনো তরুণের কথায়। তারা বলতো ওই রমণসাহিত্যের বাজারে ঠেলাঠেলি না করে আমরা কি পারি না আলাদা মেলা করতে! হাসতাম, প্রধানত সংখ্যার কথা ভেবেই। এখন ভাবি হয়তো অচিরেই এমন একটা কিছু ঘটে যাক। কারণ কাজ যখন পথ করে নেয় যুক্তি দিয়ে তাকে ফিরিয়ে রাখা যায় না। এই সময়ের তরুণ আলেম লেখকদের সাহিত্যকর্ম অভিজ্ঞতার প্রাচীন যুক্তির দেয়ালগুলোকে কতো সহজে সরিয়ে দিয়েছে। সেত এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড। কেউ কেউ ভাবছেন এখন আলেম শিখিয়েদের চরিতাভিধান রচনা করার কথা। যদি করা হয় বাংলাভাষার একটা উজ্জ্বল দিক উম্মোচিত হবে।

সাহিত্যে স্বধর্মের এই শক্ত দীপ্ত উপস্থিতি রমণবিলাসী কলকিসেবী সাহিত্যকাতরদের যতোই বাতাস করুকÑ একুশ শতকের বাংলাভাষার জন্যে সেরা অর্জন। এই অর্জনকে বুকে ধারণ করেই পালিত হতে যাচ্ছে এবারের একুশ বাংলাভাষার শুভার্থীদের জন্যে এটা অনেক বড় সান্ত্বনা। আর যারা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন নির্মাণ করেছেন ইসলামি সাহিত্যের এই অনিন্দ্য মিানার তাদের জন্যে এটা অনেক বড় প্রেরণাদায়ক সংবাদ। এ ধারার লেখক প্রকাশক ও হিতার্থী পাঠককে এখন বসতে হবে গুণবিচারে। বসতে হবে অর্জন ও প্রয়োজনের নানামাত্রিক তুলনা-বিশ্লেষণে।

দেখতে হবে একটি বিষয় যেখানে দশটা রচনারসে আপ্লুত সেখানে আরেকটি বিষয় পূর্ণ কৃতজ্ঞতার রয়ে গেছে কিনা। লেখক-প্রকাশক পাঠকের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে মুখোমুখি বসার সময় হয়েছে এখন। উত্তীর্ণ পাঠকের স্বপ্নের যাদু কঁচি লেখককেও করে তুলতে পারে সাধনাবিলাসী। সন্ধান দিতে পারে অপেক্ষমান নতুন দিগন্তের। উন্মোচিত করতে পারে লেখকের জন্যে নতুন পথ। লেখক প্রকাশক পাঠকের বিশ্বাস চিন্তা ও অনুভুতি ভাগাভাগি করে সমৃদ্ধ নতুন আগামী নির্মাণের এই সময়কে, সময়ের এই আবেদনকে আমরা উপলব্ধি করবো। পূর্বসুরীদের স্বপ্ন সত্য করে ঘরে তুলবো আমরাই। আল্লাহ আমাদের সহায়।
 ঢাকা.২৪.০১.১২

(তথ্য:রাহমানী পয়গাম।)
#alhudabd 

No comments

Powered by Blogger.