চেয়ারে বসে নামায : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর (দারুল উলূম করাচী-এর নতুন ফতওয়ার আলোকে)
মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেব(দাঃবাঃ)
আবুল কালাম
নারায়নগঞ্জ
প্রশ্ন : মুহতারাম, কিছুদিন পূর্বে চেয়ারে বসেনামায বিষয়ে একটি রিসালা (পুস্তিকা) হাতেপেলাম, যা মূলত এ বিষয়ে জামেয়া দারুলউলূম করাচী-এর ফতওয়া বিভাগ থেকেজারিকৃত বিভিন্ন সময়ের ফতওয়ারসংকলন। মাকতাবা দারুল উলূম করাচীথেকে প্রকাশিত। শুনেছি এর বাংলাঅনুবাদও হয়েছে। এই রিসালা পড়ার পরআমার জেহেনে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। আশাকরি এ সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আমাকেকৃতজ্ঞ করবেন। প্রশ্নগুলো নিম্নরূপ :
১. রিসালাটির বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, যেব্যক্তি জমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষমসে যদি চেয়ারে নামায আদায় করে তাহলেতার উপর জরুরী সামনে তখতা, টেবিল বাঅন্যকিছু রেখে তার উপর সিজদা করা।কারণ, এটাও নিয়মতান্ত্রিক সিজদা। সুতরাংযে ব্যক্তি এভাবে সিজদা করতে সক্ষম তাকেএভাবে সিজদা করতে হবে। শুধু ইশারারমাধ্যমে সিজদা করা সহীহ হবে না।’’
এখন আমার প্রশ্ন হল, বাংলাদেশেরউলামায়ে কেরামকে তো মাসআলাটিএভাবে বলতে শুনিনি। এখানে তোসাধারণত দেখা যায় এ ধরনের মাযূরমুসল্লীগণ ইশারায় রুকু-সিজদা আদায়করেন। এখন উল্লিখিত ফওয়ার আলোকেআমাদের কী করা উচিত?
২. যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে সক্ষমকিন্তু রুকু সিজদা করতে সক্ষম নয়, অথবারুকু করতে সক্ষম কিন্তু সিজদা করতে অক্ষম।আমাদের দরসী কিতাবাদীতে পড়েছি, এইব্যক্তি দাড়িয়ে বা বসে যেভাবে ইচ্ছা নামাযআদায় করতে পারবে। কিন্তু উত্তম হল, এইব্যক্তি বসে নামায আদায় করবে এবংইশারায় রুকু সিজদা করবে। আমি একআলেমের কাছে এই মাসআলার দলীলজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মুখতাসারুইখতিলাফিল উলামা’তে (১ : ৩২৫) এরএকটি দলীল উল্লেখ আছে।
দারুল উলূম করাচী-এর রিসালায়ও এইমাসআলা এভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।কিন্তু এক্ষেত্রে আমার একটি বিষয়ে একটুখটকা লাগছে। তা হল, যে ব্যক্তি দাড়িয়েনামায আদায় করতে সক্ষম তার দাড়িয়েইনামায আদায় করা উচিত। রুকু সিজদাকরতে সক্ষম নয় তো রুকু সিজদা ইশারায়আদায় করবে। কিন্তু ‘কিয়াম’ (দাড়ানো) কেনছেড়ে দেবে? এই মাসআলায় কি ফিকহেহানাফীতে শুধু একটিই ‘কওল’ (মত) নাকিঅন্য ‘কওল’ও আছে? যদি থাকে তাহলেদলীলের আলোকে কোনটি বেশি মজবুত?
৩. আজকাল চেয়ারে বসে নামায পড়ারপ্রবণতা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। অনেক মানুষতো শুধু আরামের জন্য চেয়ারে বসে নামাযআদায় করেন। আবার কিছু মানুষ যদিওতাদের রুকু সিজদা করতে কষ্ট হয়, কিন্তুজমিনে বসে ইশারায় রুকু সিজদা করতেপারেন। তা সত্ত্বেও তারা নির্দ্বিধায় চেয়ারেবসে নামায আদায় করেন।
আমার প্রশ্ন হল, শুধু আরামের জন্য চেয়ারেবসে নামায আদায় করা কি ঠিক? যদি কেউতা করে তার নামায কি সহীহ হবে? আর যেব্যক্তি জমিনে বসে নামায আদায় করতেপারে তার জন্য কি শুধু এই ওযরে চেয়ারেবসে নামায আদায় করা সহীহ হবে যে, সেরুকু সিজদা করতে সক্ষম নয়?
আশা করি বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানাবেন।
উত্তর : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এক.
যে ব্যক্তি জমিনে সিজদা করতে অক্ষম তারব্যপারে হুকুম হল, সে ইশারায় সিজদা আদায়করবে। এমন মাযূর ব্যক্তি যদি অন্য কোনকারণে চেয়ারে বসে নামায আদায় করেনতাহলেও তিনি ইশারায়ই সিজদা করবেন, সামনে তখতা বা টেবিল রেখে তাতে সিজদাকরার প্রয়োজন নেই। যদি কেউ এমনটি করেতা সিজদা বলে গণ্য হবে না। অবশ্য এরদ্বারা যেহেতু ইশারার কাজ হয়ে যায় ফলেতার সিজদা আদায় হয়ে যাবে।
চেয়ারে বসে সামনে তখতা বা টেবিলইত্যাদির উপর কপাল রাখাকে দুই কারণেসিজদা বলা সহীহ নয়। ১. সিজদার জন্যশর্ত হল, উভয় হাঁটু জমিনের উপর রাখা। ২. সিজদার সময় কপালের অংশ কোমরেরঅংশ থেকে নীচু থাকা দরকার। চেয়ারে বসেসামনের কোন কিছুর উপর কপাল রাখলেউল্লিখিত উভয় শর্ত পাওয়া যায় না। সুতরাংসেটাকে হাকীকী সিজদা (নিয়মতান্ত্রিকসিজদা) বলা ঠিক নয়।
আর আপনি মাকতাবা দারুল উলূম করাচীথেকে প্রকাশিত রিসালার বরাতে যে কথালিখেছেন, তা যদিও দারুল উলূম করাচীরইকিছু ফতওয়ায় উল্লেখ আছে, কিন্তু সম্প্রতিএই মাসআলার বিষয়ে উসতাযে মুহতারামহযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকীউসমানী দামাত বারাকাতুহুমের এক সদ্যলিখিত ফতওয়া আমাদের হস্তগত হয়েছে।যাতে দারুল উলূম করাচী-এর দারুলইফতার অন্যান্য হাযারাতের দস্তখতওরয়েছে। তাতে হযরত দামাত বারাকাতুহুমআগের ফতওয়া থেকে ‘রুজুর’ (প্রত্যাহারের) ঐ লেখায় হযরত ‘‘ফাতওয়াশামী’’র ঐ ‘ইবারাতের’ (বক্তব্য) উপর বিষদআলোচনা করেছেন যার ভিত্তিতে দারুলউলূমের আগের ফতওয়া দেয়া হয়েছিল।এবং তিনি এটা প্রমাণ করেছেন যে, ঐইবারাতের ভিত্তিতে এই মাসআলার দলীলদেয়া সিদ্ধ নয়। তিনি স্পষ্ট লিখেছেন :
"لہذا كرسى پر بيٹهكر سامنے كسى چيز پر سجدہ كرنے كو "سجدۂ حقيقيہ" (باقاعدہ سجدہ) كہنا درست نہين"
‘‘... তাই চেয়ারে বসে সামনে কোন কিছুরউপর সিজদা করাকে ‘হাকীকী সিজদা’ (নিয়মতান্ত্রিক সিজদা) বলা ঠিক নয়।’’
তিনি আরও লিখেছেন,
كرسى پر بيٹهنے كى صورت پر علامہ شامى رحمة اللہ عليہ كى بات صادق نہيں آتى، اوراس كى بنياد پر سامنے كى كسى چيز پر سجدہ كرنے كو واجب نہيں كہا جا سكتا ہے.
‘‘চেয়ারের উপর বসে নামায আদায়কারীরক্ষেত্রে আল্লামা শামীর ঐ বক্তব্য প্রযোজ্য নয়এবং এর ভিত্তিতে সামনে কোন কিছু রেখেতার উপর সিজদা করাকে ওয়াজিব বলাযায় না।’’
এই সদ্য লিখিত ফতওয়ার শেষে হযরতলিখেছেন,
اس تحرير سے پہلے دار الافتاء جامعہ دار العلوم كراچى سے جارى ہونے والے فتاوى ميں كوئى جزء اس تحرير كے خلاف ہےاس سے رجوع كيا جاتا ہے.
‘‘এই লেখার পূর্বে দারুল ইফতা, জামেয়াদারুল উলূম করাচী থেকে জারিকৃতফতওয়ার যে সকল অংশ এই লেখারখেলাফ হয় তার থেকে ‘রুজু’ করা হচ্ছে।’’ অর্থাৎ তা প্রত্যাহার করা হল।
এই ফতওয়ার উপর তারিখ দেয়া আছে ২রবিউস সানী ১৪৩৪হিজরী।
আর আপনি ঐ রিসালার বরাতে যেইফতওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন তা বর্তমানফতওয়ার চেয়ে অনেক আগের তারিখের।
বর্তমান ফতওয়ায় যাঁদের সম্মতিসূচকদস্তখত রয়েছে :
1. আব্দুর রউফ সাখ্খারবী (মুফতী)
2. মাহমুদ আশরাফ উসমানী (মুফতী)
3. আব্দুল মান্নান (নায়েবে মুফতী)
4. আব্দুল্লাহ [বরমী] (সদস্য)
5. আসগার আলী রাববানী (সদস্য)
এই ফতওয়ায় দারুল ইফতার সীলের মধ্যেফতওয়া নাম্বার লেখা আছে : ৪১/১৫০৮।
দুই.
যে ব্যক্তি জমিনে সিজদা করতে সক্ষম নয়তার ব্যাপারে হানাফী ফকীহগণের প্রসিদ্ধমত ওটাই যা আপনি দরসী কিতাবেরহাওয়ালায় লিখেছেন যে, ‘‘এমন ব্যক্তিরউপর দাড়িয়ে নামায আদায় করা জরুরী নয়বরং সে বসে ইশারায় নামায আদায় করবে।’’
এ বক্তব্যটি যদিও একেবারে দলীলবিহীননয়, কিন্তু অনেক মুহাক্কিক ফকীহের দৃষ্টিতেএই মাসআলায় দলীলের বিচারে ফিকহেহানাফীর ঐ বক্তব্য বেশি শক্তিশালী যা ইমামআবু হানিফার রাহ. শাগরিদ ইমাম যুফারইবনে হুযাইল রাহ.-এর মাযহাব। আর এটাইবাকী তিন ইমামের (ইমাম মালেক রাহ., ইমামশাফেয়ী রাহ. এবং ইমাম আহমাদ ইবনেহাম্বল রাহ.) মাযহাব। আর তা হল, এমনব্যক্তি ( যে ব্যক্তি জমিনের উপর সিজদাকরতে অক্ষম) যদি দাড়িয়ে নামায আদায়করতে সক্ষম হয় তাহলে তাকে দাড়িয়েইনামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু সেসিজদা করতে অক্ষম তাই সে ইশারায়সিজদা করবে (যদি রুকু করতেও অক্ষম হয়তাহলে রুকুও ইশারায় আদায় করবে)।জমিনে সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণেদাড়ানোর ফরয ছাড়া যাবে না।
মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাতবারাকাতুহুমের যে নতুন ফতওয়ার কথাউপরে আলোচনা হয়েছে তাতে তিনি এইমাসআলার উপর বিশদ আলোচনা করেছেনএবং ‘ফাতহুল কাদীর’ খ. ১ পৃ. ৪৬০, ‘আননাহরুল ফায়েক খ. ১ পৃ. ৩৩৭ এবং‘ইলাউস সুনান খ. ৭ পৃ. ২০৩ ইত্যাদিরবরাতে দালায়েলের আলোকে এই ‘কওল’ (বক্তব্য)-কেই শক্তিশালী বলেছেন যে, কিয়ামের ফরয আদায় থেকে শুধু ঐ ব্যক্তিছাড় পাবে যে দাড়িয়ে নামায আদায় করতেঅক্ষম। সিজদা করতে অক্ষম হওয়ার কারণেকিয়াম-এর ছাড় পাবে না। তিনি সেখানেবিশদভাবে ঐ কথারও খন্ডন করেছেন যে, শুধু সিজদার জন্য কিয়াম ফরয করা হয়েছে।তাই সিজদা করতে অক্ষম হলেই কিয়ামজরুরী থাকে না। তিনি একাধিক দলীল দ্বারাএ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কিয়াম নামাযেরএকটি স্বতন্ত্র ফরয তা শুধু সিজদার জন্যনয়।
এমন কি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকীউসমানী দামাত বারাকাতুহুম ঐ ফতওয়ায় একথাও লিখেছেন যে, যে ব্যক্তি দাড়িয়েনামায শুরু করতে পারে কিন্তু সিজদার জন্যজমিনে বসার পর আবার দাড়াতে তারঅনেক কষ্ট হয়, এমন ব্যক্তিও কিয়াম(দাড়িয়ে নামায পড়া) একেবারে ছাড়বে না।বরং প্রথম রাকাত দাড়িয়ে আদায় করবে।এরপর দাড়াতে কষ্ট হওয়ার কারণে বাকীনামায বসে আদায় করবে।
এর সাথে সাথে হযরত দামাত বারাকাতুহুমএ বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, জমিনের উপর সিজদা করতে অক্ষম কোনমুসল্লী যদি ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মতঅনুযায়ী আমল করে এবং পুরা নামায বসেআদায় করে এবং ইশারায় রুকু সিজদা করেতাহলে তার নামায ফাসেদ হয়েছে বলব না।কারণ, গায়রে মুজতাহিদের (মুজতাহিদ নয়এমন) জন্য মুজাতাহিদের ‘কওল’ও (বক্তব্য) দলীলে শরয়ী। সুতরাং যে ব্যক্তি সে অনুযায়ীআমল করেছে আমরা বলব না তার নামাজফাসেদ হয়েছে।
(لأن المسألة من الاجتهاديات، و القول المشهور و إن كان مرجوحا من حيث الدليل و لكنه ليس من الزلات المحضة، فله بعض الأدلة أيضا، مذكور في "مختصر اختلاف العلماء" ج ١ ص ٣٢٥-عبد المالك)
তিন.
যে ব্যক্তি শুধু আরামের জন্য অথবা মামুলিকষ্টের বাহানায় চেয়ারে নামায আদায়করছেন তিনি মস্ত বড় ভুল কাজ করছেন।এভাবে নামায আদায় করার দ্বারা তারনামাযই হবে না। তার উপর ফরয, দাড়িয়েনামায আদায় করা এবং যথা নিয়মে রুকুসিজদা আদায় করা।
আর যে ব্যক্তি জমিনের উপর বসে নামাযআদায় করতে সক্ষম তার জন্য শুধু এইবাহানায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করাঠিক নয় যে, সে দাড়িয়ে নামায আদায়করতে বা রুকু সিজদা করতে অক্ষম। বরং এধরণের লোকেরা জমিনে বসে নামায আদায়করবে। চেয়ারে বসে নামায আদায় করবেনশুধু ঐ লোকেরা যারা জমিনে বসে নামাযআদায় করতে অক্ষম।
হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তাকী উসমানীদামাত বারকাতুহুম তার সদ্য লেখা এফতওয়ায় চেয়ারে বসে নামায আদায় করারক্ষতির দিকগুলো আলোচনা করতে গিয়েবলেন, ‘জমিনে বসে নামায আদায় করারশক্তি থাকা সত্ত্বেও চেয়ারে বসার যেপ্রচলন দেখা যায় তাতে বিভিন্ন দিক থেকেআপত্তি রয়েছে।
১. মাযুর ব্যক্তিদের জন্য জমিনে বসে নামাযআদায় করাই উত্তম ও মাসনূন তরীকা। এরউপরই সাহাবায়ে কেরাম রাযিয়াল্লাহুআনহুম এবং পরবর্তীদের আমল চলেআসছে। চেয়ারে বসে নামায আদায় করাররেওয়াজ কেবল শুরু হয়েছে। খায়রুলকুরূনে এর নযীর নেই। অথচ সে যুগেমাযুরও ছিল চেয়ারও ছিল।
২. যে ব্যক্তি শরীয়তের দৃষ্টিতে মাযুর নয়, অর্থাৎ কিয়াম, রুকু সিজদা করতে সক্ষম, তার জন্য জমিনে বা চেয়ারে বসে ফরয এবংওয়াজিব নামায আদায় করাই জায়েয নেই।অথচ কখনো কখনো দেখা যায় এ ধরণেরসুস্থ ব্যক্তিও সামনে চেয়ার পেয়ে চেয়ারেবসে নামায আদায় করে নেয়। ফলে তারনামাযই হয় না।
৩. চেয়ারের ব্যবহারের কারণে কাতারসোজা করা ও সোজা রাখার ক্ষেত্রে অনেকসমস্যার সৃষ্টি হয়। অথচ মিলে মিলে দাড়ানোও কাতার সোজা করার বিষয়ে হাদীস শরীফেজোর তাকীদ এসেছে।
৪. বিনা প্রয়োজনে মসজিদে চেয়ারেরঅধিক্যের কারণে তা নাসারাদের গির্জা ওইহুদীদের উপাসনালয়ের সাদৃশ দেখা যায়।তারা গির্জায় চেয়ার ও বেঞ্চে বসে উপাসনাকরে। আর দ্বীনী বিষয়ে ইহুদী নাসারা ওঅন্যান্য জাতির সাদৃশ্য থেকেহ নিষেধ করাহয়েছে।
৫. নামায তো এমন ইবাদত যা আদায়করতে হয় বিনয়াবনত হয়ে বিগলিতচিত্তে।আর চেয়ারে বসে নামায আদায় করার চেয়েজমিনে বসে নামায আদায়ের মাঝে তাপূর্ণমাত্রায় পাওয়া যায়।
৬. কোন কোন যুবক ও সুস্থ ব্যক্তি নামাযেরপর মসজিদে রাখা চেয়ারে বসে আরামকরে। কখনো কখনো চেয়ার নিয়ে গোল হয়েবসে আলাপচারিতায় লিপ্ত হয়। এটামসজিদের পবিত্রতা, মার্যাদা ও আদবেরখেলাফ।
৭. মসজিদে চেয়ারের ব্যবহারের কারণেকোন কোন ছুরতে কুরআনে কারীম এবংমুরববী নামাযীদের আদব ও এহতেরামেরব্যত্যয় ঘটে।’’
(নমুনা স্বরূপ আপত্তির এ সাতটি দিক উল্লেখকরার পর হযরত লেখেন :)
اس لئے اشارہ سے نماز پرهنے كے لئے بهى حتى الامكان كرسيوں كے استعمال سے بچنا چاہئے اور ان كے استعمال كى حوصلہ شكنى كرنى چاہئے، اور ان كا استعمال صرف ان حضرات كى حد تك محدود كرنا چاہئے جو زمين پر بيٹهكر نماز ادا كرنے پر قادر نہ ہوں.
‘‘...এ জন্যই ইশারায় নামায আদায় করারজন্যও যথাসম্ভব চেয়ারের ব্যবহার না করাচাই। চেয়ার ব্যবহারের প্রতি নিরুৎসাহিতকরা চায় এবং এর ব্যবহার কেবলমাত্র ঐসকল ব্যক্তির মাঝে সিমাবদ্ধ করা উচিত, যারা জমিনে বসে নামায আদায় করতেসক্ষম নয়।’’
এই স্পষ্ট বক্তব্য সত্ত্বেও হযরত আবারএটাও লিখেছেন যে, রুকু সিজদা করতেঅক্ষম ব্যক্তিগণ জমিনের উপর বসে ইশারায়নামায আদায় করতে সক্ষম হওয়ার পরওযদি চেয়ারে বসে নামায আদায় করে থাকেন, তাহলে সেটাও জায়েয, কিন্তু অনুত্তম কাজ।আর দারুল উলূম দেওবন্দের ফতওয়ায়এটাকে শুধু অনুত্তমই বলা হয়নি বরং বলাহয়েছে, তা বিভিন্ন কারণে ‘কারাহাত’ মুক্তনয়।
আমার যদ্দুর জানা আছে, আমাদের দেশেরবিভিন্ন দারুল ইফতার ফতওয়াও এটাই।মারকাযুদ দাওয়ার দারুল ইফতার ফতওয়াওএটাই যে, রুকু সিজদায় অক্ষম ব্যক্তিগণজমিনে বসতে সক্ষম হলে তাদের জন্যচেয়ারে বসে নামায আদায় করা মাকরূহ। যাপরিহার করা জরুরী। আর রুকু সিজদায়সক্ষম ব্যক্তি যদি এমনটি করে তাহলে তোতার নামাযই শুদ্ধ হবে না।
মোদ্দাকথা এই যে, যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামাযআদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্পপদ্ধতি হল, জমিনে বসে তা আদায় করা।আর যে রুকু সিজদা করতে অক্ষম তার জন্যবিকল্প পন্থা হল, ইশারায় তা আদায় করা।আর যে ব্যক্তি যমিনে বসে নামায আদায়করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প হল, চেয়ারেবসে নামায আদায় করা। কেবলমাত্র প্রথম ওদ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসে নামাযআদায় করা ঠিক নয়।
আপাতত আপনার প্রশ্নের উত্তরে এইসংক্ষিপ্ত কিছু কথা বলে শেষ করলাম। যদি আল্লাহ তাওফীক দেন তাহলে মাযূর ব্যক্তিদের নামায বিষয়ে বিস্তারিত ও দালীলীক একটি প্রবন্ধ আল কাউসারে প্রকাশ করার ইচ্ছা থাকল।
و ما توفيقي إلا بالله عليه توكلت و إليه أنيب.
বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
দারুল ইফতা
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
৯ জুমাদাল উলা ১৪৩৪ হিজরী
(তথ্য:মাসিক আলকাউসার। জুমাদাল উখরা ১৪৩৪হিঃ)
#alhudabd
No comments