Header Ads

Header ADS

মুত্তাকীদের চার গুণ

সূরায়ে ক্বফের কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করেছি। সে আয়াতগুলোর সূ ধরে কয়েকটি কথা বলব ইনশাআল্লাহ। কথাগুলো দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং মজলিসে উপস্থিত সবাইকে ফায়দা পৌঁছান। আমীন। প্রথম আয়াতগুলো হচ্ছে :
وَ اُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِیْنَ غَیْرَ بَعِیْد  هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ
(তরজমা) জান্নাতকে উপস্থিত করা হবে মুত্তাকীদের অদূরে। তোমাদের প্রত্যেক তওবাকারী ও সংরক্ষণকারীকে  এরই প্রতিশ্রæতি দেওয়া হয়েছিল। -সূরা ক্বাফ  (৫০) : ৩১-৩২
মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত
হাশরের ময়দানে একটি দৃশ্যের কথা এই আয়াতগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছেমুত্তাকীদের জন্য জান্নাতকে অদূরে এনে উপস্থিত করা হবে। হাশরের ময়দান থেকে জান্নাত দেখা যাবে। ইশারা করে বলা হবে : هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ (এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সাথে দুনিয়ায়।) দুনিয়াতে জান্নাতের ওয়াদা শুনেছি না আমরাতখন ওখানে দেখিয়ে বলা হবে- এই জান্নাতেরই ওয়াদা করা হয়েছিল তোমাদের সাথে।
কে পাবে এই জান্নাতلِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ   حَفِیْظٍ : যে নিজের সত্তাকে কলুষমুক্ত রাখে। নিজেকে শুদ্ধ ও সাফ-সুথরা রাখে। আল্লাহ তো আমাকে সাফ-সুথরা পয়দা করেছেন। জন্মের সময় গুনাহের ময়লা আমার সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আমি আমাকে গুনাহের ময়লা থেকেপাপের ময়লা থেকেঅপরাধের ময়লা থেকে সাফ-শুদ্ধ রাখব। حَفِیْظٍ -এর আরেক মর্মসংরক্ষিত। নিজেকে সংরক্ষণ করব সকল অপরাধ থেকে। حَفِیْظٍ  : সংরক্ষণ করব আমি আল্লাহর বিধানগুলোকেআল্লাহর পক্ষ থেকে বেধে দেওয়া হারাম-হালালের গণ্ডিকে। সংরক্ষণ করব আল্লাহর আহকামগুলোকে । حَفِیْظٍ  আমি ভাল থাকব। নিরাপদ থাকব।
তওবার মর্ম ফিরে আসা
এরপরও আমরা মানুষ। গুনাহ হয়ে যেতে পারে। ভুল হয়ে যেতে পারে। হয়ে গেলে আবার গুনাহর উপর অনমনীয় থাকব না। আমাদের গুনাহর উপর দম ধরে থাকব না। এমন মনে করব না যে (নাউযুবিল্লাহ) গুনাহ-ই আমার জীবনের মিশন বরং গুনাহ হয়ে গেলেই সাথে সাথে আল্লাহর দিকে ঘুরে আসব। তওবার মাধ্যমে ফিরে আসব। গুনাহ করার মানেই হল আল্লাহর কাছ থেকে আমার চেহারা ফিরে গেল। আমি তো ঈমানের মাধ্যমেকালিমার মাধ্যমেতাওহীদের মাধ্যমে আল্লাহমুখি ছিলাম।
وجهت وجهي للذي فطر السماوات والأرض.
(আমি আমার চেহারা ওই সত্তার দিকে ঘুরিয়েছিযিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশ ও যমীন) আমি তো আল্লাহমুখি। মুওয়াহহিদ হওয়া আর কালিমা পড়ার অর্থ আমি আল্লাহমুখি। আমার দিল আল্লাহর দিকেআমার চেহারা আল্লাহর দিকে। পক্ষান্তরে অপরাধ হওযা- গুনাহ হওয়া মানেই হলআমি অন্যদিকে ফিরে গেলাম। আমার কেবলা পরিবর্তন হয়ে গেল। এখন তো শয়তানকে আমি আমার লক্ষ্য বানিয়ে ফেললাম। নাউযুবিল্লাহ। তওবার মাধ্যমে তাই ফিরে আসা হয়। তওবাকে তওবা এজন্যই বলা হয় যেতওবার মাধ্যমে আবার ফিরে এসেছে। আমি তো অন্যদিকে চলে গিয়েছিলাম। নাআমার রাস্তা তো এটা নয়। আমার গন্তব্য তো এদিকে নয়। আমার কেবলা ভিন্ন। আবার ফিরে এসেছি। আবার তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি। তওবার মানেই হল ফিরে আসা।
গুনাহর রাস্তাটা আল্লাহর রাস্তা নয়। গুনাহ করার অর্থ হলআল্লাহর দিক থেকে আমি অন্য দিকে চলে যাচ্ছি। তওবা করে আবার আল্লাহর দিকে ঘুরছি। আমরা বেশি বেশি আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। এক গুনাহর জন্য একশবার তওবা করি। এক গুনাহর জন্য একশবার ইস্তেগফার পড়ি।
أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأتُوبُ إلَيهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ.
সকালে এবং সন্ধ্যায় পড়ব :
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ.
এটি সাইয়েদুল ইস্তিগফার।
অন্তরে থাকবে আল্লাহর ভয়
لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ : এখানে এই দুটি গুণের কথা বলা হয়েছে। এ গুণ দুটি কিন্তু দেখা যাবে আমার সীরাত-সুরতে। আমি হাফীয কি না এবং আওয়াব’ অর্থাৎ গুনাহ হয়ে গেলে ফিরে আসছি কি না। এ দুটি গুণ মুমিনের দৃশ্য বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। এ দুটি কখন হবেযখন আরো দুটি অদৃশ্য বৈশিষ্ট্য মুমিনের মধ্যে থাকবে তখন। ওই দুটি বৈশিষ্ট্যের কথা সামনে বলা হচ্ছে। مَنْ خَشِیَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَیْبِ  (রহমানকে যে না দেখেই ভয় করে) দেখেনি সে রহমানকে এখনোকিন্তু সে রহমানকে ভয় করে। আসমায়ে হুসনা অনেকগুলো। আল্লাহর সুন্দর নাম অনেক। এখানে جبار  (প্রতাপশালী)  قهار(পরাক্রমশালী) এগুলো বলা হয়নি। বলা হয়েছেরহমান। মনে হতে পারে- ‘জাব্বারকে কাহহারকে ভয় করে’ এভাবে বলা হলে বেশি মুনাসিব হত। কিন্তু আল্লাহ এভাবেই বলেছেন এবং বাস্তবেই ভয় তো রহমানকেই করা উচিত। আমি ইনসান। যিনি আমার সাথে দয়ার মুআমালা করেনতাকেই তো আমার ভয় করা উচিত। এখানে ভয় মানে কীভয় মানে মহব্বত মিশ্রিত ভয়। মানুষের জন্য আমরা শ্রদ্ধা’ শব্দ যেখানে ব্যবহার করিমহান খালেকের জন্য সেখানে উপযোগী শব্দ যা হবে- এই ভয় দ্বারা সেটাই উদ্দেশ্য।
وَ جَآءبِقَلْبٍ مُّنِیْبِ : (আল্লাহর দরবারে হাযির হয়েছে কলবে মুনিব -আল্লাহমুখি দিল নিয়ে) কলব যদি আল্লাহমুখি হয়কলবের মধ্যে যদি রহমানের ভয় থাকে তাহলে আমলগুলোর মধ্যে দেখা যাবে حَفِیْظٍ(সংরক্ষণকারীকলুষমুক্ত)-এর গুণটা প্রকাশ পাবে। আচার-আচরণলেনদেনউঠাবসা যাবতীয় বিষয়ে এবং জীবনের যত অঙ্গন আছে সবগুলোর মধ্যে। আর বিপরীত কিছু হয়ে গেলেই তওবা-ইস্তেগফার করবে। এই চারটি গুণের সমষ্টি- ব্যক্তিত্বই হল মুত্তাকী।
মুত্তাকীর জন্য চার গুণ
মুত্তাকী কাকে বলেমুত্তাকী হতে হলে এই চারটা গুণ লাগবে। দিলে আল্লাহর খাশিয়াত (ভয়) থাকা আর ওটার প্রভাবে হাফীয হওয়া। আল্লাহর বিধানকে খেয়াল করে চলা। বেদআত থেকে বেঁচে সুন্নাত মোতাবেক চলা। গুনাহ হলে তওবা করা। আল্লাহর দরবারে আল্লাহমুখি দিল নিয়ে হাযির হওয়া। এই চারটা বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে মুত্তাকী বলা হবে। ওই মুত্তাকী মুসলমানদেরকেই বলা হবে অদূরে বেহেশতের উপস্থিতির কথা। সেখানে নিশ্চিন্তে প্রবেশ করতে বলা হবে তাদেরকে। সেখান থেকে কেউ তাদের বের করবে না।
ادْخُلُوْهَا بِسَلٰمٍ ؕ ذٰلِكَ یَوْمُ الْخُلُوْدِ
(তরজমা) তোমরা সেখানে শান্তিতে প্রবেশ কর এবং এটিই চিরকালের আবাসস্থলে প্রবেশের দিন। -সূরা ক্বাফ (৫০) : ৩৪
জান্নাতে যারা যাবে চিরকাল থাকবে। সেখান থেকে কেউ তাদের বের করবে না।
لَهُمْ مَّا یَشَآءُوْنَ فِیْهَا وَ لَدَیْنَا مَزِیْدٌ
(তরজমা) জান্নাতে যা তাদের মনে চায় সব পাবে এবং আল্লাহর কাছে আছে আরো বেশি।) -সূরা ক্বাফ (৫০) : ৩৫
মানুষের মনের চাওয়াও এক সময় শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহর নিআমতের শেষ নেই। একথাই বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে আরো বেশি থাকবে  তাকওয়ার এই সিফাতগুলো অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা আমাদের পূর্ণ মুত্তাকী হওয়ার তাওফীক দান করুন। 
[১৮ মে ২০১৫ তারিখে একটি মজলিসে প্রদত্ত বয়ান। অনুলিখন : শরীফ মুহাম্মদ]

(তথ্য:মাসিক আলকাউসার। যিলহজ্ব ১৪৩৬হিঃ)
#alhudabd 

No comments

Powered by Blogger.